বৈদ্যপুর গ্রামের এক গরীব কৃষকের চার ছেলে দুই মেয়ে ছিল। তাদের বেশ কষ্টে দিনাতিপাত করতে হতো। চার ছেলের মধ্যে সেজো ছেলেটি একটু আলাদা প্রকৃতির। ওর নাম টিপু সুলতান। সবাই আদর করে টিপু বলে ডাকতো। একদিন মাঠে পাড়ার ছেলেদের সাথে গরু চরানোর সময় ছেলেরা বাজি ধরল, কে কত দূর ঢিল ছুঁড়তে পারে। সবাই যে যার মতো হাত দিয়ে ঢিল ছুঁড়ল। কিন্তু টিপুর ছিল অন্য বুদ্ধি। সে ভাবলো, একটা ছোট গুলতি দিয়ে যদি অনেক দূর পযর্ন্ত গুলি ছোঁড়া যায়! তাহলে সেই একই পদ্ধতি ব্যবহার করে গামছার মাথায় ঢিল আটকিয়ে অন্য প্রান্ত ধরে কয়েকবার জোরে ঘুরিয়ে ছুঁড়লে ঢিল আরো বেশি দূর যাবার কথা।
যেই ভাবা সেই কাজ। টিপুর ঢিল গেল সবার চেয়ে বেশি দূরে। টিপু জিতে গেল। এবার সবাই টিপুর মতো তাদের গামছা দিয়ে ঢিল ছুঁড়তে চেষ্টা করতে লাগল। অন্য ছেলেদের ঢিলও প্রায় টিপুর ঢিলের কাছাকাছি চলে গেল। এবার তাকে অন্য বুদ্ধি খাটাতে হবে। টিপু জানে, জিনিস যতো ভারি তাকে ছুঁড়তে পারলে সেটি আরও বেশি দূর যায়। তাই সে পাথর ও মাটির সাদা ঘুসিন (এক ধরনের বেলে পাথর) বা ইটের খোয়া খুঁজতে লাগল। তারা খেলছিল খালের ধারে। সেখানে অনেক ঘুসিন পাওয়া যায়। সহজেই পাওয়া গেল। টিপুর দেখাদেখি সবাই ঘুসিন ছুঁড়তে লাগল। ফলে প্রায় সবাই একই সমান দূরে ছুঁড়তে পারলো। কিন্তু টিপু থামার পাত্র নয়। তাই সে অন্য ফন্দি আঁটল। সে কালো পাথর খুঁজতে লাগল। কারণ, কালো পাথর ঘুসিনের চেয়ে ভারি।
খালে ঢালের মাটি বৃষ্টির পানিতে ক্ষয়ে যায়। মাটির ভিতর থেকে অনেক জিনিসই বাইরে বেরিয়ে আসে। টিপু পাথর খুঁজছিল কিন্তু পেল না। তাই সে যখন ছেলেদের নিকট ফিরে এলো, হঠাৎ তার পা কিছু একটার সাথে হোঁচট খেল। সে পেছন ফিরে দেখল, কালো শক্ত কিছু একটা মাটিতে পুঁতে আছে। তার কিছু অংশ বাইরে বেরিয়ে আছে। টিপু তার হাতের লাঠিটা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তুললো পাথরটি। সে লক্ষ্য করল পাথরটি কেমন যেন অন্য রকম। তার কিছু জায়গা যেন চকচক করছে। কালো পাথরটি এমন চকচক করে টিপু এই প্রথম দেখল। তাই সে পাথরটিকে না ছুঁড়ে খালের পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করল। এতে পাথরটির উজ্জ্বলতা আরও বেড়ে গেল।
টিপু কাউকে কিছু না বলে পাথরটি লুকিয়ে রাখল। বেলা শেষে ছেলেরা তাদের গরুগুলি নিয়ে যে যার বাড়ি ফিরে এলো। টিপু সেই পাথরটি তার ঘরের কোণে লুকিয়ে রাখল। রাতে সবাই খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমাতে গেল। টিপুর সাথে তার এক ভাই ঘুমায়। তাই তারা কেরোসিনের বাতিটা ফুঁ-দিয়ে নিভিয়ে শুয়ে পড়লো। তারা দুই ভাই কথা বলছিল কিন্তু ঘুমাই নি। লক্ষ্য করল আবার তারা ঘরের সব কিছু দেখতে পাচ্ছে। ঘরের আলো ধিরে ধিরে বাড়তে লাগল। টিপুর ভাই বলল, বাতিটা আবার জ্বলে উঠল কিনা! টিপু দেখল না বাতিটা জ্বলে নি। তাহলে আলো কিসের? সে ঘরের কোণে তাকিয়ে দেখল, সেদিক থেকে আলো আসছে। টিপু দৌড়ে গিয়ে দেখল, সেই পাথরটি জ্বলছে। সে অবাক হয়ে দেখতে লাগল। আর সারারাত ঘুম হলো না। সকালে বাড়ির সবাই জেনে গেল।এরপর পাথরটি সারা গ্রামের মানুষ দেখতে এলো। কয়েকদিন পর একটি জিপগাড়ি টিপুদের বাড়িতে হাজির হলো। রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘরের পরিচালক এসে পাথরটি নিয়ে গেলেন। আর তারা টিপুকে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার দিলেন। এবার সবাই জানলো, টিপুর আবিষ্কার কত দামি ছিল!